কর্মসূচির রূপরেখা
আলোকিত মানুষ চাই শ্লোগান নিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ১৯৮৪ সাল থেকে নিয়মিত বইপড়া কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের মনকে উন্নত ও ঐশ্বর্যময় করে তোলার চেষ্টা করা হয় মূলত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বইপড়ার ভেতর দিয়ে। বই যেহেতু পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষদের হৃদয়ের সেরা ঐশ্বর্যের সুন্দরতম উপহার, সেহেতু আমরা মনেকরি নিরন্তর ওই দীপ্তি ও সৌন্দর্যের সংস্পর্শে বাস করলে তাদের মনও দীপান্বিত হতে থাকবে। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে পরিচালিত বইপড়া কর্মসূচিটি ইতোমধ্যে একটি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ন কার্যক্রম হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। কর্মসূচিটির নাম দেশভিত্তিক উৎকর্ষ কার্যক্রম। এর ফলও আমরা ইতোমধ্যেই পেতে শুরু করেছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি দেশের উৎসাহী, জিজ্ঞাসু এবং হাজার হাজার তরুণ-তরুণী জীবনের উৎকর্ষময় বিকাশের দিকে এগিয়ে আসছে, বেড়ে উঠছে।
বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট’(সেকায়েপ) এর পক্ষ থেকে দেশের মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে কেন্দ্রের ‘দেশভিত্তিক উৎকর্ষ কার্যক্রম’ এর অনুরূপ একটি বইপড়া কর্মসূচি ১২৫টি উপজেলার সবকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাস্তবায়ন করছে। কর্মসূচিটির নাম পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি। ২০১৫ সালে আরো ৯০টি উপজেলায় এই কর্মর্সূচি সম্প্রসারিত হবে।
বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে সারাদেশে প্রায় ৮,৫০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই বইপড়া কর্মসূচি চালু রয়েছে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ৯০ ভাগ প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠ্য বইয়ের বাইরে অন্য কোন বইপড়ার সুযোগ নেই। এই অবস্থায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এ পর্যন্ত প্রায় ৩ মিলিয়ন পাঠককে বইপড়া কর্মসূচির সুবিধা প্রদান করেছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে সকল কর্মসূচি মিলিয়ে ২০১৩ সালে প্র্রায় ১ মিলিয়ন পাঠক অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ছেলেমেয়েদের পূর্ণতরভাবে বিকাশের লক্ষ্যে বইপড়া কর্মসূচির পাশাপাশি নানা ধরণের সাংস্কৃতিক কর্মসূচি একইসাথে পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের সকল শ্রেণির সব বয়সের মানুষের কাছে বই সহজলভ্য করে এবং বইপড়াকে আন্দোলন হিসাবে গ্রহণ করে দেশের ৫৬টি জেলায় ৪৬টি ছোট-বড় ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বইপড়ার সুযোগকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। কেন্দ্রের নানাবিধ কর্মসূচি রয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক পাঠচক্রের পাশাপাশি ২০১৩ সাল থেকে ‘আলোর ইশকুল’ নামে শিক্ষা ও সংস্কৃতির সমন্বিত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এদেশে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের বিকাশ কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠছে। সারাদেশে উচ্চতর জ্ঞানচর্চার লক্ষ্যে অনেক পাঠচক্র গড়ে তোলার কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। বাংলাভাষার সেরা বইগুলোর পাশাপাশি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বইয়ের প্রকাশনার মাধ্যমে মানবসভ্যতার সেরা বইগুলোকে পাঠকের ঘরে ঘরে নিয়ে যাবার চেস্টা করা হচ্ছে।
জ্ঞানচর্চা ও জীবনের সম্পন্ন চর্চাকে আমরা সারাদেশের প্রতিটি অঙ্গনে ছড়িয়ে দিতে চাই। ভাল বইপড়ার মাধ্যমে সারা দেশের মানুষের পাঠাভ্যাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বসাহিত্য কে্ন্দ্র নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ অব্যাহত রেখেছে। তারই ধারাবাহিকতায় শুরু হচ্ছে অনলাইন বইপড়া কর্মসূচি। বর্তমান সময়ে হাতের নাগালে চলে এসেছে তথ্যপ্রযুক্তি, এর বহুমাত্রিক ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। বই আর কেবল কাগজে ছাপা, বাঁধানো মলাট দেয়া পরিসরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। কাগজের বইয়ের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক বা ই-বুক বা ডিজিটাল ভার্সনে বইপড়ার পাঠক সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত বিশ্বে ই-বুক এখন বেশ জনপ্রিয়। আমাদের দেশে ল্যাপটপ, ট্যাবলেট কম্পিউটার, ই-বুক রিডার এবং সাম্প্রতিক সময়ের মোবাইল ফোনসেটগুলো ইলেকট্রনিক বই পড়াটাকে অনেক সহজ করে দিয়েছে।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, গ্রামীনফোনের সার্বিক সহযোগিতায় নিজস্ব প্রকাশনার নির্বাচিত কিছু বই নিয়ে অনলাইনে ‘আলোর পাঠশালা’ নামে বইপড়া কর্মসূচি শুরু করেছে। এ কর্মসূচিটি সকলের জন্য উন্মুক্ত। বইপড়াকে উৎসাহিত করার জন্য রয়েছে পুরস্কারের ব্যবস্থা। পুরস্কার হিসাবে দেয়া হবে বই। আগ্রহী যে কেউ সদস্য হয়ে বইপড়া কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। যারা সদস্য হবেন তারা খুব সহজেই এই সাইট থেকে বিনামূল্যে বইগুলো ডাউনলোড করে পড়তে পারবেন। ভবিষৎতে এ কর্মসূচির ব্যাপ্তি আরো বাড়ানো হবে। ধীরে ধীরে একটি সমৃদ্ধ ই-লাইব্রেরি গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সম্পর্কে আরও জানতে পড়ুন ''বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের রূপরেখা''।