বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চ ও বাংলাদেশ
বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক তারিখ আছে।যেগুলো আমাদের সবার মনে রাখা প্রয়োজন।এর মধ্যে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ অন্যতম।১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তৎকালীন রমনা রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন তাতে স্বতঃস্ফুর্ততা ছিল ঠিকই। কিন্তু নিছক স্বর্তঃস্ফূর্ত ব্যাপার ছিল না। পাকিস্তান নামক উপনিবেশে তাঁর ২৩ বছর বসবাসের অভিজ্ঞতার সংহতরুপ ছিল ৭ই মার্চের ভাষন।উক্ত ২৩ বছরের অভিজ্ঞতা ছিল-তিক্ত, যন্ত্রনাময়, নিপীড়নমূলক।একজন রাজনীতিবিদদের বক্তৃতা যিনি তার অভিজ্ঞতার আলোকে মানুষকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন, দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের। মানুষের কথা যে মানুষকে স্বপ্ন দেখাই, অনুপ্রেরনা জোগায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরন হলো ৭ই মার্চের ভাষন।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিলো।১লা মার্চ ১৯৭১ সালে শুরু হয়েছিলো অহিংস অসহযোগ আন্দোলন।২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিলো।৭ই মার্চ ঘোষনা করা হয়েছিলো স্বাধীনতার।১৭ মার্চ ছিলো বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন।২৫শে মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী শুরু করেছিলো পৃথিবীর ইতিহাসে এক জঘন্যতম এবং বৃহত্তম গনহত্যা।২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু ঘোষনা করেছিলেন স্বাধীনতার।এক কথায় মার্চ মাস ছিলো আমাদের স্বপ্নের মাস, অনুপ্রেরনার মাস।
বঙ্গবন্ধু একমাত্র রাজনীতিবিদ যিনি বাঙ্গালির মুক্তির জন্য একই সঙ্গে গনতান্ত্রিক ও সশস্ত্র পন্থার কথা চিন্তা করেছিলেন।পাকিস্তানের কাঠামোয় বাস করে গনতান্ত্রিক পন্থায় সমস্যা সমাধান চেয়েছিলেন।একই সাথে সাথে চেয়েছিলেন পাকিস্তানিদের মতো বর্বররা কখনো গনতান্ত্রিক পন্থায় সমঝোতায় আসবে না।তাই সশস্ত্র পন্থায় তাদের সাথে সমঝোতা করতে হবে।এক্ষেত্রে তিনি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর অনুগামী ছিলেন।১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ অন্তিমে তিনি বাঙালিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন সশস্ত্র পন্থার জন্য তৈরী হতে।
মূলত ৭ই মার্চ তৈরী হয়েছে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর লাগামহীন শোষন ও বঞ্চনার কারন থেকে।বঙ্গবন্ধু তৎকালীন সময়ে ছাএ সমাজের তীব্র আন্দোলনকে এবং সাধারন মানুষের শোষীত ও বঞ্চনার জীবনকে মুক্তি দিতে রেসকোর্স ময়দানে ভাষন দেন।যা দেশের স্বাধীনতার ভাষন হিসেবে পরিচিত।৭ই মার্চের ভাষনে যাওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু চারটি ইশতেহার তেরী করেছিলেন।প্রথমতঃ সমারিক আইন তুলে নিতে হবে।দ্বিতীয়তঃ সৈন্যদের ক্যান্টনমেন্টে ফিরিয়ে নিতে হবে।তৃতীয়তঃ যেসব হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে।চতুর্থতঃ জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।উনিশ মিনিটের যে জ্বালাময়ী ভাষন বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন তা দেশের প্রত্যেকটা মানুষের হৃদয়কে ছুয়ে গিয়েছিলো।বিশেষ করে তৃনমূলে নেতা কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর ভাষনের যে দুটি লাইন খুব বেশী প্রভাবিত করেছিলো তাহলো “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আামদের স্বাধীনতার সংগ্রাম”।৭ই মার্চের এই ভাষনকে বাঙ্গালির সনদ পত্র হিসেবেও অখ্যায়িত করা হয়।