এন্টিগোনি; সফোক্লিসের অমর ট্রাজেডি নাটক।
ভাইয়ের প্রতি প্রচন্ড অনুরক্ত তিনি। রক্তের বন্ধন, বোনের কর্তব্যকে তিনি অস্বীকার করতে পারেনি। রাজার আজ্ঞার বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন। অন্য বোন ইজিমনি অপারগতা ও ভীতু হলেও তিনি নির্ঘাত মৃত্যু জেনেও নিজের প্রতিজ্ঞা হতে সরে আসেনি। নিজ কর্তব্যে অবিচল জেদি নারী ‘এন্টিগোনি’। যিনি সফোক্লিসের অন্যতম ট্রাজেডি নাটক ‘এন্টিগোনি’র প্রধান চরিত্র।কালজয়ী এ নাটকটি ৪৪২-৪৪১ খ্রি.পূ. মঞ্চায়ন করা হয়।
দৈব বাণী অনুযায়ি রাজা ইডিপাস ক্ষমতাচ্যুত ও নির্বাসিত হলে ইডিপাসের দুই পুত্র ইটিওক্লিস ও পলিনিসেস ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পরস্পরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। তখন ইডিপাসের থিবিস রাজ্যে রাজার আসনে বসেন ‘ক্রিয়ন’। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে দুই ভাই পরস্পরকে হত্যা করে। রাজা ক্রিয়ন ইটিওক্লিসকে বীর বলে আখ্যায়িত করে ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী তার শবদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করার আদেশ দেন। অন্যদিকে পলিনিসেসকে দেশদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করে তার দেহ পশু-পাখির খাবারের জন্য ফেলে রাখতে বলেন। সমগ্র রাজ্যে রাজা কর্তৃক এমন আদেশ জারি করা হয়, যদি কেউ পলিনিসেসের দেহ কবর দেওয়ার চেষ্ঠা করে ও শোক পালান করে তবে তাকে মৃত্যূদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। ইডিপাসের ছোট কন্যা এন্টিগোনি ভাইয়ের মৃতদেহের এমন অবস্থা মেনে নিতে পারেনি। একাই চুপিসারে ভাইয়ের দেহ কবর দেয় । ধরা পরার পর সে নির্ভয়ে নিজের দোষ স্বীকার করে। এন্টিগোনিকে পাহাড়ের গুহায় আটকে রাখা হয়। রাজা আদেশ দেন মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাকে সেখানেই আটকে রাখতে। ক্রিয়নের পুত্র হ্যামন ছিলো এন্টিগোনির প্রেমিক। তিনি পিতার এমন আদেশ মানতে পারেননি। ফলে পিতার সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পরে এবং জেদি হ্যামন পিতার উপর প্রতিশোধ নিতে এন্টিগোনির বন্দি গুহার কাছে আত্মহত্যা করেন। এন্টিগোনি নিজেও আত্মহত্যা করেন। রাজদণ্ডের জন্য দুজনের ভালোবাসা রূপ নেয় মৃত্যুর ট্রাজেডিতে। অন্যদিকে পুত্র শোক সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন ক্রিয়নের স্ত্রী হ্যামনের মাতা।
নাটকের প্রতিটি দৃশ্যের আবর্তে জড়িয়ে আছে এন্টিগোনি ও ক্রিয়নের দ্বন্দ্ব আদর্শ ও যুক্তি। এন্টিগোনির নিশ্চিত মৃত্যুর কাছেও তার কাজের জন্য ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। শেষ পর্যায়ে ক্রিয়ন বুঝতে পারে নিজের একঘেয়েমী, স্বৈরতন্ত্র কখনো কখনো প্রজাদের সুখ, নিজের সুখের পরিবর্তে নিজেকেই দুঃখের সাগরে ডুবে যেতে হয়। এন্টিগোনি ট্রাজেডি নাটকটির ভাষাশৈলী,শব্দের সরল বুনন,ঘটনা পরম্পরায় জী্বন্ত হয়ে উঠেছে। যেন চোখের সামনে ভাসে প্রতিটি চরিত্রের জীবন্ত মহড়া। পাঠককে খুব সহজেই ভ্রমণ করায় থিবিস রাজ্যে। যেখানে এ মহারণের ট্রাজেডি একেঁছিলেন সফোক্লিস। বইটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন মোবাশ্বের আলী। যা ১৯৯০ সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কর্তৃক প্রথম প্রকাশিত হয়।
শিশির রাজন
লেখক ও বইপড়া আন্দোলনের কর্মী।
Sheshir.rajan@gmail.com