মোহাম্মদ এয়াকুব আলী চৌধুরী যিনি সচরাচর সাহিত্যিক এয়াকুব আলী চৌধুরী নামে অভিহিত বাংলাভাষার একজন লেখক এবং সাংবাদিক। তিনি শিক্ষা সংস্কারের মাধ্যমে পশ্চাৎপদ মুসলমানদের অগ্রগামী করেন।
জন্ম, শিক্ষা
জন্ম রাজবাড়ী জেলার পাংশার মাগুরাডাঙ্গা গ্রামে ১৮ কার্তিক ১২৯৫-এ (১৮৮৮)। পিতা পুলিশ অফিসার এনায়েতুল্লাহ চৌধুরী। পাংশা হাইস্কুল থেকে এমই এবং রাজবাড়ী সূর্যকুমার ইনস্টিটিউশন থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি ভর্তি হলেও বিএ ক্লাসে পড়ার সময় দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে পড়ায় পড়ালেখা ছাড়তে বাধ্য হন।
কর্মজীবন
প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় স্বীয় অগ্রজ মাসিক সাহিত্য পত্রিকা কোহিনূর (১৩০৫-১৩০৮, ১৩১১-১৩১৩, ১৩১৮-১৩১৯ ও ১৩২২) সম্পাদক রওশন আলী চৌধুরী রোগাক্রান্ত হয়ে অক্ষম হয়ে পড়লে তিনি ঐ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ।১৯১৪-১৫ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই থানার জোরওয়ারগঞ্জ হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। এরপর রাজবাড়ী সূর্যকুমার ইনস্টিটিউশনে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯২০-২১ খ্রিষ্টাব্দে পাংশা হাইস্কুলে শিক্ষকতা করার সময় অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে যোগদান করেন এবং ফলস্বরূপ ব্রিটিশ সরকারের হাতে কারাদণ্ড ভোগ করেন। কারামুক্তির পর শিক্ষকতায় ইস্তফা দিয়ে কলকাতায় যান এবং মেজো ভাই আওলাদ আলী চৌধুরীর সাথে সাংবাদিকতায় যোগ দেন। তিনি বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির (৪ সেপ্টেম্বর, ১৯১১) প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন। এ সমিতির সম্পাদক হিসেবেও কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। সমিতির মাসিক পত্র সাহিত্যিক-এর (১৯২৬) যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। এয়াকুব আলী চৌধুরী ও কবি গোলাম মোস্তফার যুগ্ম সম্পাদনায় এটি এক বছর যাবৎ প্রকাশিত হয়েছিল। রওশন আলী চৌধুরী ও আওলাদ আলী চৌধুরীর অকাল মৃত্যুতে তাঁদের পরিবারের দায়িত্ব নেন এয়াকুব আলী। শোক-দুঃখ-দারিদ্র্যে নিপতিত হয়ে মাত্র ৪৭-৪৮ বছর বয়সে ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হন। শেষ জীবনের চার-পাঁচ বছর জীবনমৃত অবস্থায় গ্রামের বাড়িতে বাস করেন। মৃত্যুর দুই বছর আগে বঙ্গীয় সরকার মাসিক ২৫ টাকা হিসেবে সাহিত্যিক বৃত্তি মঞ্জুর করেন তাঁর জন্য।
সাহিত্যকৃতি
বাংলা গদ্যের একজন শক্তিশালী শিল্পী ছিলেন। ইসলামি দর্শন ও সংস্কৃতি তাঁর রচনার মূল উপজীব্য। বক্তব্যের বলিষ্ঠতায়, ভাষার মাধুর্যে ও ভাবের গাম্ভীর্যে তার রচনাবলি বিশেষ মর্যাদার দাবিদার। হিন্দু-মুসলমানের সমপ্রীতিতে বিশ্বাসী। বিশ শতকের প্রথম দিকে বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা বাংলা না উর্দু- এ বিতর্কে তিনি বাংলা ভাষার পক্ষাবলম্বন করেন। সুবক্তা হিসেবেও খ্যাত।