কবি
01:50 AM 14/09/2020
Rating : 10/10
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বিংশ শতকের একজন কথাসাহিত্যিক। তিনি তৎকালীন অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও তার লেখায় ফুটে উঠেছে অনগ্রসর মানুষের কথা। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম জীবনে কিছু কবিতা লিখলেও তিনি কথাসাহিত্যিক হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৩৯ সালে লেখা অন্যতম একটি সামাজিক উপন্যাস কবি। এই উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র যেনো ঐ সমাজের মাটি দিয়েই তৈরি করেছেন। উপন্যাসের ভাষাটা আপাতত দৃষ্টিতে একটু সেকেলে মনে হলেও এই ভাষার মধ্যে এক মাদকতা আছে। যা অন্তরে যেয়ে এক মমতার টান দেয়। আর উপন্যাসের প্রত্যেকটি ঘটনা এমন করে চিত্রায়িত করেছেন তা যেনো চিরসবুজ রূপ লাভ করেছে। কবি উপন্যাসে লেখক যে চরিত্রের হৃদয়ে সর্বদা জোয়ার ভাটায় আন্দোলিত করেছেন, যার কষ্টে পাঠক হৃদয়ও ব্যাকুল হয়ে ওঠে সে নিতাই । নিতাই এর জন্ম তৎকালীন হিন্দু সমাজের এক অনগ্রসর পরিবারে। যার পারিবারিক সংস্কৃতি চৌর্যবৃত্তি। কিন্তু নিতাই পরিবারের চাপিয়ে দেওয়া সংস্কৃতি কখনো মেনে নেয়নি। সঞ্চারিত জ্ঞান আর হৃদয়ের ন্যায় নীতি দ্বারা শক্তিমান মানুষ নিজেকে খুঁজতে পথে ঘর বেধেঁছিলেন । তবে এই উপন্যাসে সব থেকে বড় চুরি সংঘটিত হয়েছিল নিতাই এর মাধ্যমেই। তবে এই চুরি একটু ভিন্ন। চোরের অজান্তেই চুরি সংঘটিত হয়েছে। এই চুরি তেও গোপনীয়তা আছে, তবে লোভ নেই , আছে প্রেম। ফুলেতে ধুলাতে প্রেম হয়নাকো ফুল ফোটার কালে। ফুল ফোটে সেই আকাশমুখে চাঁদের প্রেমে হেলেদুলে। ধুলা থাকে মাটির বুকে, চরণতলে আধোমুখে ফুল ঝরিলে কার বুকে সেই লেখা তার পোড়াকপালে বলে। প্রকৃত পক্ষে মানুষ প্রেম এর টানে ছুটে বেড়ায় কিন্তু জানে না যে তার প্রেমিক সত্তাটা কে। ফুলের পাপড়ি যেমন ঝড়ে মাটিতে পরে। তারপর মাটি আর ঐ পাপড়ির প্রেম হয় মানুষের সাথে মানুষের প্রেম ঠিক সেরকম। এই বোধ তো মানুষের থাকে না তাই মানুষ কষ্ট পায়। আপসোস করে বলে - এই খেদ আমার মনে- ভালোবেসে মিটল না সাধ, কুলাল না এ জীবনে। হায়- জীবন এত ছোট কেনে? এ ভূবনে?
